সাম্প্রতিক

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

Responsive Advertisement

মহাভারতে দ্রৌপদীই নাকি প্রথম বানিয়েছিলেন ‘ফুচকা’, বাকিটা তো ইতিহাস!

 


বাংলার বাইরে পাওয়া যায় পানীপুরি। বর্তমানে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় সাজিয়ে-গুছিয়ে বিক্রি হয় সেই পানীপুরি। তবে কলকাতার রাস্তায় শালপাতার বাটি হাতে ফুচকা খাওয়ার আনন্দই আলাদা। বাঙালির প্রিয় খাবারের তালিকায় সবসময়ই সবার উপরে ফুচকা।

‘ফুচকা’ স্ট্রিট ফুড হিসেবে সারা দেশে একটি অতি জনপ্রিয় সুস্বাদু মুখরোচক খাদ্যবিশেষ। আমাদের দেশের যেকোনও প্রান্তে এমনকি গ্রাম হোক বা শহরাঞ্চল সব জায়গাতেই এই লোভনীয় খাবারটির প্রচলন রয়েছে। অঞ্চলভেদে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত।

পশ্চিমবঙ্গে এর নাম “ফুচকা”; উত্তর ভারতে এটির পরিচিতি গোল-গাপ্পা হিসেবে , আবার পশ্চিম ভারতে যেমন মহারাষ্ট্রে এটি পানি-পুরি নামেই পরিচিত। ময়দা আর সুজির কম্বিনেশনে তৈরি ফুলকো ফুলকো গোলাকার এই বস্তুটিকে ঘিরে বাঙালির উৎসাহ উদ্দিপনার শেষ নেই। ছেলে হোক বা মেয়ে, আট থেকে আশি সকলেই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে শালপাতার বাটিতে আলুর পুর আর টক জলে ভরা গোলাকার এই লোভনীয় এই বস্তুটিকে মুখে পুরতে বেশ ভালোই বাসেন। তবে আজকের এই ফুচকা প্রাচীন কালেও বেশ জনপ্রিয় ছিলো।

মহাভারতের যুগেও পৌরাণিক কাহিনীতেও এই ফুচকার উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। যদিও সেটি আজকের ‘ফুচকা’ নয় বরং ‘ফুলকি’ নামেই অধিক খ্যাতি লাভ করেছিল সেই সময়। ফুচকার উৎস রহস্য নিয়ে জনশ্রুতি অনুসারে, এটি প্রথম ভারতের মগধদের প্রাচীন রাজ্যে অস্তিত্ব লাভ করেছিল।

প্রাচীন ভারতের ১৬ টি ‘মহাজনপদ’ বা ‘গ্রেট কিংডম’ ছিলো। এর মধ্যে একটি হল, মগধ রাজ্য যা বর্তমানে দক্ষিণ বিহার নামে পরিচিত। যদিও ভারতে মগধদের রাজত্বকালের সঠিক সময়সীমা অস্পষ্ট। তবে ৬০০ খ্রিস্টপূর্বের আগে থেকেই এরা ছিল। মৈর্য এবং গুপ্ত উভয় সাম্রাজ্যেরই জন্ম মগধে হয়েছিল এবং এই অঞ্চল থেকেই ভারতে জৈন, হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মের জন্ম ও বিকাশ লাভ হয়েছিলো।

কথিত আছে যে, মগধের ফুচকা ঠিক এখনকার সময়ের মতো ছিল না। সেই সময়ে এই ফুচকাকে বলা হত ‘ফুলকি’ (আজও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুচকাকে ফুলকি হিসেবে বোঝানো হয়)। যদিও এই প্রাচীন ‘ফুলকি’ আজকের যুগের ফুচকার তুলনায় ছোট, খাস্তা এবং সবজির পুর দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে তাঁরা ফুচকার মধ্যে পুর হিসেবে ঠিক কী ব্যবহার করতেন তা অস্পষ্ট রয়েছে আমাদের কাছে। যদিও এটি আলু বা অন্য কোনও সবজির পুর হতে পারে বলে মনে করা হয়। তবে অন্য একটি জনশ্রুতি অনুসারে, মহাভারতের পঞ্চ পাণ্ডবের স্ত্রী দ্রৌপদী ফুচকা আবিষ্কারের জন্য কৃতিত্ব লাভ করেছিলেন পৌরাণিক যুগে।

পঞ্চ পান্ডব, দ্রৌপদী এবং তাঁদের মা কুন্তি যখন পাশার খেলায় রাজত্ব হারানোর পরে নির্বাসনে ছিলেন, সেই সময় একদিন কুন্তি দ্রৌপদীর রান্নার দক্ষতা পরীক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তিনি পাঁচ ভাইকে সন্তুষ্ট করার জন্য দ্রৌপদীকে ভালো কিছু রান্না করার আদপশ দিয়েছিলেন। এর জন্য কুন্তি তাঁকে কিছু আলু, সবজি এবং অল্প পরিমাণ ময়দা দিয়েছিলেন। দ্রৌপদী শাশুড়ি মায়ের সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং ময়দা, সুজির মিশ্রন দিয়ে ফুচকা আবিষ্কার করেছিলেন।

শোনা যায় এরপর পুত্রবধূদের দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে কুন্তি যেপাত্রে ফুচকা গুলি রাখা ছিলো সেই থালাটিকে অমরত্ব দিয়েছিলেন। তবে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পর্যন্ত পূর্ববঙ্গের মানুষেদের কাছে সেভাবে ফুচকার গ্রহণ যোগ্যতা ছিলো না। এমনকি সেই সময় ফুচকাকে আজকের দিনের মতো স্ট্রিট ফুড হিসেবে গণ্য করা হত না। আর স্বাধীনতার আগে যারা ফুচকা খেতে পছন্দ করতেন তাঁদের ‘ঘটি’ বলা হত। ১৯৪৭ সালের পর ঘটি-বাটি মিলেমিশে দুই বাংলার মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ফুচকা। আর এখন শুধু রসনার তৃপ্তিতে নয়, ফুচকাকে পরিবেশন করা হয় স্কচ বা ওয়াইনের সাথেও। সব মিলিয়ে সমাজ যত আধুনিক হচ্ছে ততই স্বাদের পরিবর্তন ঘটছে বাঙালীর।খাবারেও এসেছে আভিজাত্যের ছোঁয়া। তা বলে শালপাতার বাটিতে টক জলে ভরা ফুচকা খাওয়ার ট্র্যাডিশন ভুলতে পারেননি বাঙালী।